আপনাকে যদি প্রশ্ন করি যে আপনার e tin certificate (ই টিন সার্টিফিকেট) আছে কিনা? তাহলে উত্তরটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে তারপরও আপনি হয়ত এটা বলবেন যে ই টিন সার্টিফিকেট বের করা/ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা খুবই কষ্টকর।
আপনার জন্য সুখবর হচ্ছে যে, আপনি খুব সহজেই নিজেই একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল থেকে মাত্র দুই মিনিটেই e tin certificate এর জন্য এপ্লিকেশন করে ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে ফেলতে পারবেন।
তো আশা করি বুঝতেই পারছেন যে আমাদের এই আর্টিকেলটি ই টিন সার্টিফিকেট নিয়ে হতে যাচ্ছে। আমরা এই আর্টিকেলে ই টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন, ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার উপায় সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করব।
ই টিন সার্টিফিকেট কি?
প্রথমেই জেনে নেই ই টিন সার্টিফিকেট নিয়ে। বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে এই ই টিন সার্টিফিকেট (e tin certificate)।
TIN এর ফুল ফর্ম হচ্ছে Taxpayer’s Identification Number। এটি ১২ ডিজিটের একটি নাম্বার। আপনি যে করদাতা তার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার হচ্ছে TIN। আর e-TIN হচ্ছে electronic TIN মানে আপনি অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট এর আবেদন করে ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন।
টিন সার্টিফিকেট হচ্ছে একটি কাগজ যেখানে আপনার এই টিন নাম্বার এবং আপনার ব্যাক্তিগত কিছু তথ্য থাকবে। এই টিন সার্টিফিকেট সরবরাহ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
আপনার নাগরিকত্বস্বরুপ যেমন জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার রয়েছে ঠিক তেমনি টিন নাম্বার হচ্ছে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর। আপনাকে এই TIN নাম্বার ব্যাবহার করে কর দিতে হবে।
আশা করি তিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ
- রাউটারের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার সহজ নিয়ম
- জিমেইল পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করব কীভাবে | জিমেইল একাউন্ট রিকভারি
টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা
এখন জেনে নেই টিন সার্টিফিকেট (e tin certificate) আপনার কেন দরকার? এর সুবিধা কি কি? বা আপনি কেন ই টিন সার্টিফিকেট নিবেন।
- আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবী হন তাহলে আপনার টিন সার্টিফিকেট অবশ্যই দরকার হবে।
- জমি কিনতে গেলে ই টিন সার্টিফিকেট দরকার হবে।
- আপনার নামে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত থাকলে আপনাকে আপনার অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট লাগবে।
- আপনি যদি টিসিবি কিংবা এলজিইডি এর লাইসেন্স নিতে চান তাহলেও আপনাকে ই টিন সার্টিফিকেট সাবমিট করতে হবে।
- আপনি যদি কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হন আপনার জন্য ই টিন সার্টিফিকেট আবশ্যক।
- জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে ই টিন সার্টিফিকেট লাগবেই।
- এখন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে গেলেও ই টিন সার্টিফিকেট লাগে।
তো এইরকম আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আপনার ই টিন সার্টিফিকেট দরকার হবে।
করমুক্ত বার্ষিক আয়ের সীমা
আরেকটি বিষয় জেনে নিন। আপনার টিন সার্টিফিকেট থাকলেই যে আপনাকে কর দিতে হবে বিষয়টা এমন না। কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় দেখা হয়। বার্ষিক আয়ের সীমা রয়েছে যার উপরে গেলে আপনাকে কর দিতেই হবে। অর্থাৎ আপনি বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করলে কর দিতে হবে না। করমুক্ত বার্ষিক আয়ের সীমা দেখে নিন:
- সাধারণ নাগরিকঃ বার্ষিক করমুক্ত আয় ৩,৫০,০০০ টাকা
- মহিলা বা ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকঃ বার্ষিক করমুক্ত আয় ৪,০০,০০০ টাকা
- প্রতিবন্ধী নাগরিকঃ বার্ষিক করমুক্ত আয় ৪,৫০,০০০ টাকা
- গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাঃ বার্ষিক করমুক্ত আয় ৪,৭৫,০০০ টাকা
সুতরাং আপনার বার্ষিক আয় দেখেই আপনি কর দিবেন কিনা তা জেনে ফেলতে পারবেন।
e tin certificate এর জন্য আবেদন | ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার উপায়
আশা করি টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ফেলেছেন। এখন জেনে নেই কিভাবে আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে ই টিন সার্টিফিকেট (e tin certificate) বের করবেন।
ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা পর্যন্ত কাজকে আমরা মোটামুটি তিনটি অংশে বিভক্ত করতে পারি। যেমনঃ
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা
- ই টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা
- ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা
চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই।
স্টেপ ১ঃ
প্রথমে আপনি আপনার ব্রাউজার থেকে রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে যাবেন। রাজস্ব বোর্ডের ওয়েব এড্রেস https://secure.incometax.gov.bd/TINHome।
এখানে আপনি একদম উপরের দিকে Register নামে একটি অপশন পাবেন। এখানে ক্লিক করুন। এখন কয়েকটি টেক্সট বক্স দেখতে পাবেন এবং আপনাকে কিছু ইনফরমেশন দিতে হবে। এখানে আপনি প্রথমে একটি ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিবেন (পাসওয়ার্ড দুইবার দিতে হবে)।
এরপর দুইটি বক্স দেখতে পাবেন। একটি হচ্ছে Security Question এবং আরেকটি হচ্ছে Security Answer। Security Question এ ক্লিক করলে আপনি অনেকগুলো প্রশ্ন দেখতে পারবেন। যেমন আপনার প্রিয় রং কি?; আপনার প্রিয় শিক্ষকের নাম কি?; আপনার স্কুলের নাম কি?; এরকম আরও অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে।
আপনি যেটা করবেন প্রথমে একটি প্রশ্ন সিলেট করবেন, তারপর সেটির উত্তর নিচে লিখবেন। এই প্রশ্ন এবং উত্তর আপনাকে খুব ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। কারণ আপনি যদি কখনো ইউজার নেম বা পাসওয়ার্ড ভুলে যান তাহলে পাসওয়ার্ড রিকভারি করার জন্য এই প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া লাগবে।
এরপর আপনি মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস দিবেন। মোবাইলের নাম্বারটি একদম সঠিকভাবে দিতে হবে। কারণ মোবাইল নাম্বারে একটি কোড যাবে এবং তা ভেরিফাই করতে হবে। এখানে সবগুলো বক্স সুন্দর করে ফিলাপ করে নিচে Register অপশনে ক্লিক করুন।
এর পরবর্তী পেজে আপনাকে মোবাইল ফোন ভেরিফাই করতে বলা হবে এবং আপনার মোবাইল ফোন থেকে কোডটি নিয়ে ভেরিফাই করুন। এভাবে আপনি রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফেলেছেন।
স্টেপ ২ঃ
অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে ওই ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। Register অপশন এর পাশেi রয়েছে Login অপশন। এখানে ক্লিক করুন। আপনার ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার প্রোফাইলে প্রবেশ করুন।
স্টেপ ৩ঃ
এখন ই টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার পালা। আপনি হাতের বাম দিকে উপরের দিকে একটি অপশন পাবেন TIN Application। এখানে ক্লিক করুন। এখানে আপনি নতুন একটি পেজ দেখতে পাবেন যেখানে আপনাকে কিছু ইনফরমেশন দিতে হবে। এই পৃষ্ঠায় সব সঠিকভাবে দিয়ে Go to Next এ ক্লিক করুন।
স্টেপ ৪ঃ
এখন আরেকটি পেজ ওপেন হবে। এখানে মূলত আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। যেমন আপনার মাতার নাম, পিতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি। এই পেজের সবগুলো বক্স সঠিকভাবে পূরণ করুন। সর্বশেষ Go to Next এ ক্লিক করুন।
স্টেপ ৫ঃ
এবার ই টিন সার্টিফিকেট আবেদন এর সর্বশেষ ধাপ এ চলে এসেছেন। এই পেজে আপনি যে তথ্য দিয়েছেন তার বিস্তারিত দেখতে পাবেন। যদি কোথাও ভুল হয় তাহলে Back to Previous এ ক্লিক করে সঠিক তথ্য দিন। আর যদি সব তথ্য সঠিক হয়ে থাকে তাহলে Submit Application এ ক্লিক করুন।
বেশ! আপনার কাজ হয়ে গেছে। আপনি ই টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করে ফেলেছেন।
স্টেপ ৬ঃ
এখন আপনি কাঙ্ক্ষিত ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোড করার জন্য Tin Application এর নিচে একটি অপশন পাবেন View TIN Certificate। এখানে ক্লিক করুন। এখন আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেটটি দেখতে পাবেন। এর নিচে তিনটি অপশন পাবেন। তো মাঝখানের অপশন হচ্ছে Save Certificate। এটাতে ক্লিক করুন এবং আপনার ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করুন।
আরও পড়ুনঃ
- ১৫০০০ এর মধ্যে সেরা ৭টি ফোন | কম দামে ভালো ফোন
- ফেসবুক পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি | ফেসবুক পাসওয়ার্ড ফিরে পেতে করণীয়
- জিমেইল আইডি কিভাবে খুলবো | গুগল একাউন্ট খোলার নিয়ম
ই টিন সার্টিফিকেট (e tin certificate) সম্পর্কিত আরো জিজ্ঞাসা
প্রশ্নঃ এই তিন সার্টিফিকেট কি সবার জন্যই বাধ্যতামূলক?
উত্তরঃ না, তবে যে কোন সময় আপনার যে কোন কাজে লাগতে পারে।
প্রশ্নঃ ইউজার নেম কিংবা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে কি হবে?
উত্তরঃ চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার মোবাইল নাম্বার এবং আপনি যে সিকিউরিটি কোশ্চেন এবং আনসার দিয়েছিলেন ওটা দিয়ে রিকভার করতে পারবেন।
প্রশ্নঃ ই টিন সার্টিফিকেট ভুলে ডিলিট হয়ে গেছে। এখন কি করব?
উত্তরঃ এখানেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনি যতবার ইচ্ছা ততবার টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। আপনার ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করলেই আপনি আবারও টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনি খুব সহজেই কোন ঝামেলা ছাড়াই ই টিন সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করে নিজেই ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। তো আপনার ই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ।